আজ নাৎসি নেতা ও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলারের ১৩২ তম জন্মদিন। তাকে নিয়ে একটি লেখা লিখব যখন ঠিক করলাম তখন শুরুতেই লিখেছি “শুভ জন্মদিন হিটলার”। এটা কি ঠিক হল!! হিটলার ১৭ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে তার জন্মদিন কি শুভ হতে পারে? তার জন্ম না হলে কি পৃথিবীর জন্য মঙ্গল হত?
অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত এই জার্মান রাজনীতিবিদ ১৮৮৯ সালের আজকের দিনে (২০ এপ্রিল) জার্মানির সীমান্তবর্তী ব্রাউনাউ-আম-ইন গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফুয়েরার ছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন ভীষণ রগচটা, একগুঁয়ে ও জেদি। মায়ের মৃত্যুর পর সংসারের সব বন্ধন ছিন্ন করে তিনি ভিয়েনায় চলে যান। সেখানে থাকাকালীন সময়েই তার মনে জেগে ওঠে ইহুদিবিদ্বেষ। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলার সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন। এরপর তিনি যোগ দেন লেবার পার্টিতে। এক বছরের মধ্যেই তিনি এ পার্টির প্রধান হন। পার্টির নাম পরিবর্তন করে রাখেন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি। পরবর্তীতে এই পার্টিকেই বলা হত নাৎসি পার্টি।
হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানিতে তার দল ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না। ধীরে ধীরে নাৎসি বাহিনীর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। হিটলার মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে গোটা জার্মানি তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন।১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৩৫ সালে নতুন আইন চালু করে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। এ আইনে ইহুদিরা জার্মানিতে বসবাসের অধিকার পেলেও নাগরিকত্ব হারান।
বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করে। এই দিন থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। গণহত্যার মধ্য দিয়ে একের পর এক দেশ দখল করতে থাকেন হিটলার। ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালে হিটলার বাহিনী রাশিয়া আক্রমণ করে। প্রথমদিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন হিটলার বাহিনী ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে।অবশেষে মিত্র শক্তি বিজয় লাভ করে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হিটলারের রাজ্যজয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে। ইহুদি নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে 'হলোকস্ট' নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে হিটলার বার্লিনে ছিলেন। রেড আর্মি যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল সে রকম একটা সময়ে হিটলার তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। হিটলারকে গভীরভাবে ভালবাসতেন ইভা। বিয়ের পর দুটি চিঠি লিখেন। একটিতে তিনি সবকিছুর জন্য ইহুদিদের দায়ী করেন এবং অপরটিতে নিজের সব সম্পত্তি পার্টিকে দান করে দেন।
দিনটা ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল। হিটলার বুঝতে পারলেন যেকোনো মুহূর্তে তিনি লালফৌজ বাহিনীর হাতে বন্দি হতে পারেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাঙ্কার থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সঙ্গে দেখা করে বলেন, তার মৃত্যুর পর যেন লাশ এমনভাবে পোড়ান হয় যাতে তার দেহের অংশের কোন চিহ্নই না থাকে। এর কিছুক্ষণ পরেই হিটলার নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আর তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন। হিটলারের দুই সৈন্য তার মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন।
#SAS
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন