বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০

নাবিকদের জীবন্ত ডুবিয়ে মেরে জাহাজ রক্ষার এক প্রক্রিয়া!

#কাউন্টারফ্লাডিং
কাউন্টার ফ্লাডিং। শব্দটা শুনলেই এর কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা চলে আসার কথা৷ কাউন্টার ফ্লাডিং অর্থ এমন একটি প্রক্রিয়া যা, ফ্লাডিং এর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। প্রশ্ম হলো, ফ্লাডিং কি?

উত্তরটা খুব সহজ। Flooding বা ফ্লাডিং অর্থ কোন স্থান ডুবে যাওয়া৷ এজন্য বন্যাকে বলা হয় Flood. Flood থেকেই Flooding শব্দটি এসেছে। কিন্তু এর সাথে জাহাজ ও নাবিকের কি সম্পর্ক? 

অবশ্যই সম্পর্ক আছে৷ একটা  উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা সহজ হবে। ধরা যাক, একটি জাহাজের পোর্ট সাইডে ওয়াটারলাইনের নিচে একটা মিসাইল বিস্ফোরিত হয়েছে। হাল ফুটো হয়ে গেচ্ছে এবং বন্যার মতো পানি ঢুকছে। এক পাশে পানির ওজনে জাহাজ যাচ্ছে বেকে। ধীরে ধীরে ৭ ডিগ্রি, ১০ ডিগ্রি, ১২ ডিগ্রি। এভাবে যদি জাহাজ বেকে যেতে থাকে তাহলে পানি ঢুকবে অনেক দ্রুত এবং মেরামতের আশাও শেষ হয়ে যাবে৷ আর কিছুক্ষণ পরেই জাহাজটি যাবে উলটে৷ জাহাজের ফুটো যদি খুব বড় না হয় তাহলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় ফুটো মেরামত করার। কিন্তু যদি কপাল খারাপ হয় তাহলে একমাত্র ভরসা কাউন্টারফ্লাডিং। জাহাজের পোর্ট সাইড যেহেতু ধীরে ধীরে ঝুকে যাচ্ছে তাই প্রথমেই পোর্ট সাইডের পানিরোধী দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ইচ্ছাকৃতভাবে জাহাজের স্টারবোর্ড সাইডের রুমগুলোর দরজা বন্ধ করে বাইরে থেকে পানি ঢুকতে দেওয়া হয়। জাহাজের দুই দিক থেকে একইসাথে পানি ঢুকতে থাকে বিধায় জাহাজের ঝোকা কমে যায়। যদিও এতে জাহাজের ওজন অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু হিসাব অনুযায়ী করতে পারলে জাহাজ মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরোপুরি ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। 

কিন্তু নাবিকেরা? বলা বাহুল্য কাউন্টারফ্লাডিং খুবই বিপদজনক এবং সুক্ষ্ণ একটি প্রক্রিয়া। হিসাব বা সময়ে একটু গন্ডগোল হলে জাহাজ তো বাচবেই না বরং আরো দ্রুত ডুববে। তাই এর সিধান্ত নিতে হয় কয়েক সেকেন্ডের মাথায়, সিধান্ত কার্যকর ও করতে হয় কয়েক সেকেন্ডের মাথায়। তাই জাহাজদের নাবিকদের বের হওয়ার কোন সুযোগ দেওয়া হয় না। কাউন্টারফ্লাডিং চলার সময় সেইসব রুমে থাকা নাবিকরা বেশিরভাগ সময়ে জীবন্ত ডুবে মারা যায়। যদি হাতে সময় থাকে তাহলে অবশ্যই বের করানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বন্যার মতো পানি ঢুকতে থাকলে আসলে সেই সময়টা থাকে না। তাই বেশিরভাগ সময়েই নাবিকদের দরজা আটকে জীবন্ত পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়। উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করি। ধরা যাক দুই ভাই একই জাহাজের নাবিক। এক ভাই ইঞ্জিনরুমে আরেক ভাই পাশের রুমে। কাউন্টার ফ্লাডিং এর সময় পাশের রুমের ভাই যদি ডুবেও মারা যায়, ইঞ্জিনরুমে থাকা ভাই সেই দরজা খুলবেন না৷ কারণ তাতে পুরো জাহাজ ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ফ্লাডিং কাউন্টারফ্লাডিং করে অনেক জাহাজ রক্ষা পেয়েছে৷ কিন্তু চাপা পড়ে গেছে অসংখ্য নাবিকের আত্নত্যাগ। স্মরণ করি ও শ্রদ্ধা জানাই সেইসব নাবিকদের, যারা দায়িত্ব পালনে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে ডুবে মরতেও রাজি। ছিলেন ও থাকবেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ফাইটার জেটের হেলমেট

বর্তমান সময়ে আধুনিক এবং নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার হচ্ছে জেট ফাইটারের ককপিটে বসা এর পাইলটের হেল...