১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বৃহস্পতিবার ইতিহাসে একটি কালো দিন। সেদিন ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পলাশীর আম্রকাননে প্রহসনের যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলা পরাজিত হলে প্রথমে বঙ্গদেশ এবং পরে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজ কোম্পানির করতলগত হয়। ঐতিহাসিকরা বলছেন, নবারের সৈন্যরা প্রত্যেকে একটি করে ঢিল ছুঁড়লে ইংরেজরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো। কিন্তু যুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা বিজয়ী হয়। পলাশীর যুদ্ধকে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠায় একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ হিসাবে গণ্য করা হয়। এ যুদ্ধে লুণ্ঠিত সম্পদকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার করে। পলাশীর যুদ্ধ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা এবং বৃহত্তর উপনিবেশ গঠনের একটি প্রচেষ্টা। এ বিজয়ের খলনায়ক ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামরিক অফিসার কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ। তার বিজয়ের মূলে ছিল চক্রান্ত, ঘুষ প্রদান, চুক্তি ভঙ্গ এবং নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা।
শক্তিশালী রাষ্ট্রের কাছে একটি দুর্বল রাষ্ট্র পরাজিত হতে পারে। তদ্রƒপ একটি দেশের সেনাবাহিনীর কাছে আরেকটি দেশের সেনাবাহিনীর বিপর্যয় ঘটতে পারে। কিন্তু পলাশীতে ঘটেছিল তার সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার প্রবল পরাক্রান্ত নবাব মির্জা মোহাম্মদ সিরাজুদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন একটি বিদেশী জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সামান্য একজন কর্নেলের কাছে। পলাশীর যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল কয়েক ঘণ্টা। তবে যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল নবাবের সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছার অনেক আগে। যুদ্ধ না করার জন্য তার সৈন্যদের ঘুষ দেয়া হয়েছিল। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তার ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’য় ক্লাইভের বিজয়কে প্রতারণা ও ছলচাতুরির বিজয় হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতন এবং পরে তিনি নিহত হলে মীর জাফর বাংলার নবাব হন। মীর জাফরের নবাবীকালে ইংরেজরা কার্যকরভাবে বাংলার নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে ঔধের নবাব মীর কাসিম ও মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম সম্মিলিতভাবে পরাজিত হলে উত্তর ভারতে ব্রিটিশদের আধিপত্য বিস্তারের পথে আর কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। বাংলা বিজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত রচিত হয়। ব্রিটিশদের এ সাফল্যের পেছনে ঐতিহাসিক নগরী কলকাতার বিরাট অবদান ছিল। কর্ণাটক যুদ্ধে কলকাতা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান ডুপ্লের কাছে মাদ্রাজের পতন ঘটলেও ব্রিটিশরা কলকাতায় তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তারা ফরাসীদের পরাজিত করতে বাংলার সম্পদকে কাজে লাগিয়েছিল। ড. আর. সি. মজুমদার তার ‘এন এডভান্সড হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’য় মন্তব্য করেছেন, সত্যিকারভাবে পলাশীর যুদ্ধকে ভারতে ফরাসীদের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণকারী হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।
যুদ্ধ
১৭৫৭ সালের ১৩ জুন মাদ্রাজের ফোর্ট সেন্ট ডেভিডের গভর্নর এডমিরাল চার্লস ওয়াটসন নৌপথে ও ডেপুটি গভর্নর কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ চন্দরনগর (বর্তমান চন্দননগর) থেকে স্থলপথে যাত্রা করেন। চন্দরনগর ছিল একসময় ফরাসীদের ঘাঁটি। ক্লাইভের সঙ্গে যুদ্ধে ফরাসীরা এ ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেখানে তাদের আধিপত্য কায়েম করে। ১৯ জুন ক্লাইভের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা কাটওয়ায় পৌঁছে। আগেরদিন মেজর আয়ারকুট কাটওয়া দখল করে নিয়েছিলেন। ২১ জুন ক্লাইভ কলকাতার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে ১৬ মাইল ভাটিতে আম্রবাগান শোভিত পলাশী নামে একটি গ্রামের বিপরীতে গঙ্গা নদীর শাখা ভাগিরথী নদীর তীরে পৌঁছান।
ইংরেজরা এসেছিল নৌকায়। অন্যদিকে দেশীয় সিপাহীরা এসেছিল হুগলী নদীর তীর ধরে হেঁটে। ক্লাইভ শিকারের জন্য ব্যবহৃত একটি ঘরে নিজের সদরদপ্তর স্থাপন করেন। তার মনে ছিল শংকা। জীবনে প্রথম ভয় তাকে স্পর্শ করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান তিনি। নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্যরে কথা ভেবে তিনি যুদ্ধ বিলম্বিত করার কথা ভাবতে থাকেন। সহযোদ্ধাদের তিনি বলেন যে, অন্য কোনো পক্ষ অথবা মিত্র কোনো দেশের সহযোগিতা ছাড়া যুদ্ধে বিজয় অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি অভিযান বিলম্বিত করার প্রস্তাব দেন। অন্যরা তার প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় তিনি ১৬ জন ইংরেজ অফিসারকে নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করেন। যুদ্ধ বিলম্বিত করা হবে নাকি এ মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু করা হবে, এ প্রশ্নে ২১ জুন ওয়ার কাউন্সিলে ভোটাভুটি হয়। ৯ জন সদস্য যুদ্ধ বিলম্বিত করার পক্ষে ভোট দেন। ক্লাইভ ছিলেন তাদের একজন। মেজর আয়ারকুটের নেতৃত্বে অন্য ৭ জন সদস্য অবিলম্বে যুদ্ধ শুরু করার পক্ষে রায় দেন। তারা যুক্তি দিয়ে বলেন যে, বিলম্বিত করা হলে অথবা পিছু হটলে পরাজয় নিশ্চিত। নিজের কাপুরুষতার প্রতি ধিক্কার আসায় এবং মীর জাফরের পত্রে প্রদত্ত প্রতিশ্র“তির কথা মনে হওয়ায় ক্লাইভ মনোভাব পরিবর্তন করেন। তিনি এক ঘণ্টা চিন্তা করেন। মীর জাফর ক্লাইভের কাছে পাঠানো এক পত্রে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন যে, যুদ্ধ শুরু হলে তিনি নবাবের পক্ষে অস্ত্রধারণ করবেন না। ২২ জুন বিকেলে মীর জাফরের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে ক্লাইভ পলাশীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। মধ্যরাতে তিনি সেখানে পৌঁছান। প্রবল বৃষ্টিপাতের পর সূর্য উঁকি দেয়। ক্লাইভ ৩ হাজার ৩শ’ সৈন্য ও ৯টি কামান নিয়ে ভাগিরথী নদী অতিক্রম করেন এবং পলাশী গ্রামের পাশে একটি আমবাগান ও কয়েকটি পুকুরের পাড়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। অন্যদিকে নবাব সিরাজুদ্দৌলা যাত্রা করেন রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে। ইংরেজদের ১২ ঘণ্টা আগে পলাশীতে তিনি তাবু খাটান।
২৩ জুন ভোর ৭ টায় প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় য্দ্ধু শুরু হয়। নবাবের সৈন্যরা তাদের সুরক্ষিত শিবির থেকে বের হয়ে ব্রিটিশ শিবিরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে নবাবের পক্ষের বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে উঠে। সকাল ১১ টায় মীর মদন, মোহনলাল, খাজা আবদুল হাদি খান ও নবাব সিংহাজারী প্রচণ্ড গতিতে হামলা চালালে ব্রিটিশ সৈন্যরা পিছু হটে আমবাগানে আশ্রয় নেয়। ঠিক তখন গোলন্দাজ বাহিনীর কমান্ডে নিয়োজিত বকশি মীর মদন ব্রিটিশ কামানের গোলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় যুদ্ধের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। মীর মদনের অধীনস্থ সৈন্যসহ গোলন্দাজরা আতংকিত হয়ে নিজেদের তাবুতে ফিরে আসে। তখন ছিল দিনের মধ্যভাগ। গোলন্দাজ সৈন্যরা মীর মদনের লাশ নিয়ে তাবুতে ফিরে। নবাবের অধীনে তখন ছিল মাত্র ২ হাজার সৈন্য। তিনি এ মুষ্টিমেয় সৈন্য নিয়ে শত্র“র উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঐতিহাসিকরা বলছেন যে, মীর মদনের মতো নবাবের অধীনস্থ সকল সেনাপতি একযোগে হামলা চালালে ব্রিটিশরা অবশ্যই পরাজিত হতো। কিন্তু সেনাপতি ইয়ার লতিফ খান ও রায় দুর্লভ সেনাপতি মীর জাফরের মতো রণাঙ্গন থেকে দূরে অবস্থান করছিলেন। সেনাপতি মীর জাফর তার অধীনস্থ ১৬ হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের বামদিকে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকেন। নবাব তাকে বার বার তার পাশে এসে যুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। কিন্তু মীর জাফর নবাবের আহ্বানে সাড়া দেননি।
ব্রিটিশদের কামানের পাল্লা ছিল নবাবের কামানের পাল্লার চেয়ে দীর্ঘ। দুপুর ১২টায় মুষলধারে বৃষ্টি নবাবের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষায় ব্রিটিশরা তাদের কামান ও গোলাবারুদ আচ্ছাদন দিয়ে ঢেকে রাখলেও ৪০ জন ফরাসী কামান চালক নবাবের কামান রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বৃষ্টিতে গোলাগুলি ভিজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। দুপুর ২টা থেকে নবাবের কামান থেকে গোলাবর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। ক্লাইভের অন্যতম সহযোগী মেজর কিলপ্যাট্রিক দু’টি বাহিনীর মাঝামাঝি একটি পুকুরের বিপরীত দিক থেকে হামলা চালান। কামান ও গোলাগুলিতে কাজ না হওয়ায় এবং মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা ধরা পড়ায় নবাবের সৈন্যরা ভীত হয়ে পড়ে। সেনাপতি মীর মদন নিহত হলে নবাব সিরাজুদ্দৌলা মীর জাফরকে তার শিবিরে ডেকে পাঠান। মীর জাফর পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার শপথ করেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে নবাবকে পরামর্শ দেন। তিনি প্রতিশ্র“তি দেন যে, পরদিন ভোরে নতুন উদ্যমে লড়াই শুরু করা হবে। নবাব সরল বিশ্বাসে মীর জাফরের পরামর্শে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেন এবং পরদিন নাগাদ যুদ্ধ স্থগিত রাখার নির্র্দেশ দেন। মীর জাফর নবাবের শিবির থেকে বের হয়েই গুপ্তচর মারফত ইংরেজদের কাছে একটি গোপন চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি অবিলম্বে নবাবের সৈন্যদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য ক্লাইভকে ইঙ্গিত দেন। ক্লাইভ আক্রমণ চালান। নবাবের পিছু হটা সৈন্যরা অতর্কিত আক্রমণে হতচকিত হয়ে পড়ে।
দাউদপুর শিবিরের সৈন্যরা পালিয়ে নদীর ওপারে চলে যায়। নবাব পলায়নরত সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসার আহ্বান জানান। সূর্যাস্তের দু’ঘণ্টা আগে সিরাজুদ্দৌলার বাহিনীতে ব্যাপক পলায়ন শুরু হয়। ৫ টার মধ্যে তার সকল সৈন্য মাঠ ত্যাগ করে। তখন রণাঙ্গনে ব্রিটিশ সৈন্যদের একক নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। তারা নবাবের কামানগুলো দখল করে। এ পরিস্থিতিতে নবাব যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগে বাধ্য হন। রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে নৌকায় পাটনার রাজমহলের উদ্দেশে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত নবাব দানা শাহ নামে এক ফকিরের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ লোভী ফকির নবাবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় তিনি ভগবান গোলায় ধরা পড়েন। ২৭ জুন বন্দি করে তাকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে আসা হয়। পরে মীর জাফরের পুত্র মীরনের নির্দেশে ইরানী প্রহরী মোহাম্মদ আলী বেগ তাকে ২ জুলাই দিবাগত রাতে হাজার দেউরির নিমক হারাম গেইটে হত্যা করে। নবাবের লাশ হাতীর পিঠে চড়িয়ে সারা মুর্শিদাবাদ ঘুরিয়ে অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। তার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। পরে রাতের অন্ধকারে নবাবের বিশ্বাসী খাদেম হোসেন খাঁ খোশবাগে তাকে সমাহিত করেন। মৃত্যুকালে তিনি মা আমেনা বেগম, স্ত্রী লুৎফুন্নেসা, কন্যা উম্মে জোহরা ও ভাই মীর্জা মেহেদীকে রেখে যান। ২৯ জুন ইংরেজরা হীরাঝিলে নবাবের প্রাসাদে ঢুকে ধনাগার লুট করে। তারা ৩২ লাখ স্বর্ণমুদ্রা, এক কোটি ৭৬ লাখ রৌপ্য মুদ্রা, দুই সিন্দুক ভর্তি স্বর্ণপিন্ড, চার বাক্স হীরা-জহরত ও দুই বাক্স মণিমুক্তা লুট করে। আর নবাবের গোপন ধনাগার থেকে দেশীয় বিশ্বাসঘাতকরা লুট করে আট কোটি টাকা।
যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে কতজন হতাহত হয় তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। ১৮৫০ সালে প্রকাশিত আর্থার ব্র“মের ‘হিস্ট্রি অব বেঙ্গল আর্মি’ নামে ঐতিহাসিক পুস্তকের ৪৮-৪৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়, পলাশীতে ব্রিটিশদের পক্ষে ৭২ জন হতাহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৭ জন ছিল ইংরেজ এবং আহতদের মধ্যে ছিল ১৩ জন। দেশীয় সিপাহী নিহত হয় ১৬ জন এবং আহত হয় ৩৬ জন। অন্যদিকে ‘দ্য ইন্ডিয়ান রেকর্ড সিরিজ’- এ বলা হয়, ইংরেজ নিহত হয় ৪ জন ও আহত হয় ১৫ জন। দেশীয় সিপাহী নিহত হয় ১৫ জন এবং আহত হয় ৩৮ জন। নবাবের যেসব কামান ব্রিটিশদের হস্তগত হয় সেগুলো কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সংরক্ষিত রয়েছে।
নবাবের পরাজয়ের কারণ
পলাশীর যুদ্ধে বিবদমান দু’টি পক্ষের শক্তি বিবেচনায় নেয়া হলে কোনোভাবেই ফলাফলকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নেয়া যায় না। নবাবের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রতিপক্ষের তুলনায় ৬৫ হাজার বেশি। কামানও ছিল তাদের তুলনায় কয়েকগুণ। নৈতিক অবস্থান ছিল তার সঠিক। নিজের দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি যুদ্ধ করেছেন। তারপরও তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। তার পরাজয়ের প্রথম কারণ হলো সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা। যুদ্ধ শুরু হলে মীর জাফর তার অধীনস্থ সৈন্য নিয়ে রণাঙ্গনে নিষ্ক্রিয় দাঁড়িয়ে থাকেন। তার সৈন্যরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে ফলাফল হতো অন্যরকম। নবাবের পরাজয়ের দ্বিতীয় কারণ হলো যুদ্ধের ঠিক মাঝ সময়ে তার অনুগত সেনাপতি মীর মদনের মৃত্যু। সেনাপতি মীর মদন একবার আহত হন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে এবং আবার আহত হন তার কয়েক ঘণ্টা পর দুপুরে। গুরুতর আহত হয়ে তিনি মারা গেলে সৈন্যরা দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পালাতে থাকে। নবাবের পরাজয়ের তৃতীয় কারণ হলো বৃষ্টি। দুপুরে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হলে গোলাবারুদ ভিজে যায়। ফরাসী কামান চালকরা কামানগুলো বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার কোনো চেষ্টা করেনি। ফলে বৃষ্টি থেমে যাবার পর যুদ্ধ শুরু হলে নবাবের কামান থেকে গোলাবর্ষণ করা সম্ভব হয়নি। আরেকটি কারণ হলো আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালির মোকাবিলায় পশ্চিমাঞ্চলে সৈন্য প্রেরণ। ইংরেজরা যে মুহূর্তে পূর্বাঞ্চলে হুমকি সৃষ্টি করছিল, ঠিক তখন দিল্লী লুণ্ঠনকারী আহমদ শাহ আবদালি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে এসে উপস্থিত হন। শেষ কারণ হিসাবে উল্লেখ করতে হয় যে, তখনকার দিনে প্রাচ্যের অধিকাংশ শাসকের মতো নবাব সিরাজুদ্দৌলার বাহিনী ছিল সেকেলে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জ্বিত। ইংরেজরা যে পরিমাণ সৈন্য নিয়ে পলাশীতে বিজয়ী হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সৈন্য নিয়ে সে সময় তারা ইউরোপের কোনো দেশকে পদানত করতে পারতো কিনা সন্দেহ। প্রাচ্যের শাসকদের এ সামরিক দুর্বলতার সুযোগেই ইউরোপীয়রা এ অঞ্চলে পদার্পণ করার সাহস পায়।
পলাশীর যুদ্ধের জন্য একতরফাভাবে ইংরেজরা দায়ী। তারা নবাবের বিনা অনুমতিতে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করতে থাকে। ইংরেজদের দূরভিসন্ধি টের পেয়ে নবাব তাদেরকে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ উঠিয়ে নিতে এবং অস্ত্রসজ্জা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। একজন সার্বভৌম শাসক হিসাবে নিজ দেশের ভূখণ্ডে বিদেশীদের অস্ত্রসজ্জা বন্ধের হুকুম দেয়ার পরিপূর্ণ এক্তিয়ার তার ছিল। কিন্তু তারা তার সার্বভৌম অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে মাদ্রাজ থেকে অস্ত্র আমদানি করতে থাকে। ১৭৫৬ থেকে ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপে ব্রিটিশ ও ফরাসীদের মধ্যে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধকালে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসময় দু’টি দেশ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশের মধ্যে মোট ৩৯ টি যুদ্ধ হয়। পলাশীর যুদ্ধ ছিল তার একটি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার উইন্সটন চার্চিল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধকে প্রথম মহাযুদ্ধ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ইউরোপে বিদ্যমান যুদ্ধের আলোকে লা কোম্পাগনি দ্যস ইন্ডিস অরিয়েন্টালস নামে একটি ফরাসী কোম্পানি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে মোকাবিলার জন্য একটি ক্ষুদ্র সেনাদল পাঠায়।
কলকাতা অবরোধ
কলকাতা অবরোধ ছিল পলাশীর যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ। দু’টি কারণে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ অবরোধ করা হয়। প্রথম কারণ ছিল রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভের ফোর্ট উইলিয়ামে আশ্রয় গ্রহণ। কৃষ্ণবল্লভের অবাধ্যতার জন্য নবাব তাকে একবার বন্দি করেছিলেন। পরে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তিলাভের পর পিতা রাজবল্লভ তাকে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ধনসম্পদসহ ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে আশ্রয় দেয়ার জন্য ইংরেজদের রাজি করান। নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকানোর জন্য ইংরেজরা কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেয়। ইংরেজরা ধনসম্পদসহ তাকে ফেরত দেয়ার দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করলে নবাব ক্রোধান্বিত হন। কলকাতা অবরোধের দ্বিতীয় কারণ ছিল ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ মেরামত। ফরাসীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক দ্বন্দ্বের পটভূমিতে ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ শুরু হলে ভারতে ডুপ্লের অধীনস্থ ফরাসী বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষ বাধে। ফরাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মাদ্রাজের পতন ঘটলে ১৭৫৬ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ মেরামত করতে থাকে। ফোর্ট উইলিয়াম মেরামতের কথা জানতে পেরে বাংলার নয়া নবাব সিরাজুদ্দৌলা অগ্নিশর্মা হয়ে যান। তিনি তাদের প্রচেষ্টাকে তার সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি হুমকি হিসাবে বিবেচনা করছিলেন। দুর্গের ৩৪ বছর বয়স্ক অস্থায়ী গভর্নর রজার ড্রেক ছলনার আশ্রয় নিয়ে নবাবকে জানান যে, তারা কেবল নিজেদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো দুর্গ মেরামত করছেন না। এসময় ইংরেজরা মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় বিপুলসংখ্যক সৈন্য আমদানি করে এবং নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে থাকে। ইংরেজদের অভিসন্ধির কথা জানতে পেরে নবাব ১৭৫৬ সালে মে মাসের শেষ দিকে রায় দুর্লভের নেতৃত্বে ৫০ হাজার সৈন্যের একটি বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন এবং গভর্নর ড্রেকের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ৩ জুন নবাবের সৈন্যরা ষড়যন্ত্রের মূল ঘাঁটি কাশিমবাজার কুঠি অবরোধ করে। এ কুঠিতে ৫০ জন ইংরেজ অবস্থান করছিল। দু’দিনের মাথায় কাশিমবাজার কুঠি আত্মসমর্পণ করে। কুঠির কমান্ডার ছাড়া আর কেউ গুলিবর্ষণ করেনি। পতন নিশ্চিত হয়ে উঠলে এ কমান্ডার আত্মসমর্পণ না করে আত্মহত্যা করেন। নবাবের সৈন্যরা কুঠির সকল ব্রিটিশ কামান ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করে এবং কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম অভিমুখে অগ্রযাত্রা করে। নবাবের সৈন্যদের অগ্রযাত্রার খবর পৌঁছলে ফোর্ট উইলিয়ামে আতংক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। গভর্নর ড্রেক ছিলেন উদ্ধত স্বভাবের। এ স্বভাবের জন্য তিনি স্বদেশীয়দের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। কিছু যোগ্য কর্র্মকর্তার পরামর্শ তিনি উপেক্ষা করেন। কাশিমবাজারের পতন ঘটলে ড্রেক ও কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিল ফরাসী ও ওলন্দাজদের কাছে সহায়তা পাঠানোর জন্য বিনীত আবেদন জানায়। তবে কোনো পক্ষই ব্রিটিশদের সংকটে তাদের সহায়তা দানে রাজি হয়নি। এ পরিস্থিতিতে ফোর্ট উইলিয়াম শক্তিবৃদ্ধির জন্য মাদ্রাজে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়। মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ সৈন্য প্রেরণে অক্ষমতা প্রকাশ করলে গভর্নর ড্রেক নবাবের সকল দাবি মেনে নিতে সম্মত হন। তবে তিনি অনেক দেরি করে ফেলেন। ফোর্ট উইলিয়ামের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিকের তিনটি মূল সড়কে কামান বসানো হয়। ছোট ছোট রাস্তাগুলোয় বসানো হয় বাঁশের চিকন কঞ্চি। দুর্গ প্রতিরক্ষায় কমান্ডার ক্যাপ্টেন মিনচিন মাত্র ১৮০ জন যোদ্ধা খুঁজে পেয়ে বিস্মিত হন। তাদের মধ্যে ৪৫ জন ছিল ব্রিটিশ, বাদবাকিরা ছিল পর্তুগীজ ও আর্মেনীয়। ‘লেখক’ হিসাবে পরিচিত কোম্পানির শিক্ষানবিশদের নিয়ে দ্রুত একটি মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হয়। কর্নেল ম্যানিংহাম ও লে. কর্নেল ফ্রাঙ্কল্যান্ড মিলিশিয়া বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে আরো তিন শ’ যোদ্ধাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে কলকাতা রক্ষায় ইংরেজদের সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র ৫১৫ জন। নবাব সিরাজুদ্দৌলার অগ্রযাত্রার খবর পাওয়া মাত্র কলকাতার ‘ব্লাক টাউন’ বা কৃষ্ণ পল্লী থেকে লস্করসহ সকল স্থানীয় লোকজন পালিয়ে যায়। এসব লোক পালিয়ে যাওয়ায় তাদের মধ্য থেকে ইংরেজরা সৈন্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়। ৩ জুন নবাব সিরাজুুদ্দৌলার বাহিনীর একটি অগ্রবর্তী দল ফোর্ট উইলিয়ামের ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। এসময় কলকাতার সকল ইংরেজ মহিলা ও শিশুদের দুর্গে আশ্রয় নেয়ার আদেশ দেয়া হয়। ইংরেজ কামান চালকদের গোলাবর্ষণের সুযোগ না দিয়ে নবাব দুর্গ অবরোধ করেন এবং দক্ষিণের দেয়ালে আঘাত হানেন। ১৭৫৬ সালের ২০ জুন সংক্ষিপ্ত অবরোধের পর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের পতন ঘটে। নবাব কলকাতার নামকরণ করেন ‘আলীনগর।’ নবাব মানিকচাঁদকে কলকাতার গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দিয়ে রাজধানী মুর্শিদাবাদ ফিরে আসেন। রাজধানীতে তাকে বিপুল সংবর্ধনা জানানো হয়। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ অবরোধকালে দুর্গের গভর্নর ও অন্যান্য কর্মকর্তা আটকেপড়া ইউরোপীয়দের তাদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে হুগলি নদী দিয়ে পালিয়ে যান। এসময় নবাবের সৈন্যদের হাতে ধৃত কিছুসংখ্যক ইউরোপীয় একটি কক্ষে আটক থাকা অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনাকে ফুঁলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয় এবং দু’জন জীবিত ইংরেজ দাবি করে যে, নবাবের নির্দেশে ১৪৬ জন বন্দিকে একটি সংকীর্ণ কক্ষে আটক করে রাখা হয়। তাদের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে ১২৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনার নামকরণ করা হয় ‘ব্ল্যাক হোল ট্রাজেডি।’
ফোর্ট উইলিয়ামের পতন ঘটলে এ দুর্গের ব্রিটিশ কাউন্সিল মাদ্রাজে ফোর্ট সেন্ট জর্জের প্রেসিডেন্সীর কাছে সহায়তা কামনা করে। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাদ্রাজস্থ ফোর্ট সেন্ট জর্জ থেকে কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ ও এডমিরাল চার্লস ওয়াটসনকে কলকাতা অভিমুখে পাঠানো হয়। তারা ১৭৫৭ সালের ২ জানুয়ারি পুনরায় কলকাতা দখল করেন এবং হুগলির উত্তর দিকে এগিয়ে যান। ইংরেজদের কাছে ফোর্ট উইলিয়ামের পতনের সংবাদ পেয়ে নবাব সিরাজুদ্দৌলা ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে আবার কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন। ক্লাইভ আলোচনার প্রস্তাব দিলে নবাব তা প্রত্যাখ্যান করেন। আলোচনা করার সুযোগ না পেয়ে ২ ফেব্র“য়ারি ক্লাইভ শহরের বাইরে নবাবের শিবিরে আক্রমণ চালিয়ে পরাজিত হন। ৬ শ’ ব্রিটিশ নৌ সেনা, সাড়ে ৬ শ’ ইউরোপীয় সৈন্য ও ৮ শ’ দেশীয় সিপাহী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ১০০ ইউরোপীয় ও ৫০ জন সিপাহী নিহত হন। নবাবের পক্ষে নিহত হয় ৬ শ’ সিপাহী। লড়াই থেমে যাবার ৫ দিন পর উভয়পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছে। আহমদ শাহ আবদালীর আক্রমণের আশংকায় নবাব ৭ ফেব্র“য়ারি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এ চুক্তি করেন। চুক্তিটি আলীনগরের সন্ধি নামে পরিচিত। নবাব ফোর্ট উইলিয়াম দখলের জন্য ইংরেজদের ক্ষতিরপূরণ প্রদানে প্রতিশ্র“তি দেন। আলীনগর চুক্তিতে নবাব সিরাজুদ্দৌলা সাময়িকভাবে পরাজয় স্বীকার করে নিলেও তিনি আবার ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফরাসীদের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলছিলেন।
(লেখাটি 'দুনিয়া কাঁপানো যুদ্ধ’ থেকে নেয়া।)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন